শাহজাদপুর উপজেলা একটি ব্যবসায়ী এলাকা, এ কারণে শাহজাদপুরের মানুষের মাথাপিচু আয় জাতীয় মাথাপিচু আয়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন। এ এলাকার মানুষের মূল ব্যবসা হচ্ছে কাপড়ের ব্যবসা। শাহজাদপুরের সর্বত্র তাত রয়েছে এবং এখানে শাড়ী, লুঙ্গি, গামছা উৎপাদিত হয়।
শাহজাদপুরের গৌরবময় ঐতিহ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে এখানকার প্রকান্ড কাপড়ের হাট। এই কাপড়ের হাটই হচ্ছে শাহজাদপুরের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রধান চালিকাশক্তি। সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার দুইদিন স্বাভাবিক হাট বসতো। সেখানেই বেচা-কেনা হতো নানারকম কাপড়। কিন্তু বর্তমানে কাপড়ের কেনাবেচার বিপুল চাহিদার প্রয়োজনে সপ্তাহে রবি ও বুধবার বিশাল আকারে শুধু কাপড়ের হাট বসে। সেখানে অন্য কিছু বেচাকেনা হয় না। সপ্তাহের দুইদিনের কাপড়ের হাটে এতো বেশি কাপড়ের আমদানি হয় যে, তা না দেখলে অনুমান করা সম্ভব নয়। হাটে-উঠা বিপুল পরিমান কাপড়ের মধ্যে রঙবেরঙের শাড়িই প্রধান। এরপর লুঙ্গি ও গামছা। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রকম কাপড়।
বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চল থেকেই আসে কাপড়ের ছোট-বড় ব্যাপারি ও পাইকাররা। এই হাজার হাজার খরিদ্দারের পদচারনায় মুখরিত থাকে শাহজাদপুর। এখানকার হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট পাইকরদের উপস্থিতিতে গমগম করে। প্রতি হাটে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়। এরই ফলে শুধু শাহজাদপুর উপজেলা সদরেই বিভিন্ন ব্যাংকের ষোলটি শাখা রয়েছে। এই কাপড়ের হাটের কল্যানে প্রচুর অর্থের লেন-দেন চলে ব্যাংকগুলোতে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এবং দেশের বাইরে থেকে যেসব ব্যবসায়ীরা আসেন, তাদেঁর টাকা পয়সা ও খরিদকৃত কাপড়ের নিরাপত্তার ব্যাপারে শাহজাদপুর বাসী এবং স্থানীয় প্রশাসন অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন। ফলে যে বিপুল পরিমান টাকা এবং কাপড় তা কখনোই চুরি, ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে না। কাজেই বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বেশ নিরাপদে নির্ভয়ে কাজ করতে পারেন।
শুধু তাই নয়, এই কাপড়ের হাটের খাতিরে শাহজাদপুরে কোনো প্রকার হরতাল-ধর্মঘট পর্যন্ত হয় না। সারাদেশ যখন হরতালে অচল থাকে তখনও শাহজাদপুরের কাপড়ের হাট স্বগৌরবে স্বাভাবিকভাবে চলে। এছাড়াও, শাহজাদপুরে পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক-এমন কি রাজনৈতিক উৎসব অনুষ্ঠানের কর্মসূচিও হাটের দিন বাদ দিয়ে করা হয়ে থাকে। সত্য কথা বলতে কি, শাহজাদপুরের সামগ্রিক জীবনধারা অনেকাংশে এই হাটের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। শাহজাদপুরের কাপড়ের হাট যেন এখানকার ধমনিতে রক্ত প্রবাহের মতো অনিবার্য এবং গুরুত্বপূর্ন।
বলা হয়ে থাকে এই হাটে যে বিপুল পরিমান কাপড় আমদানি হয় তার শতকরা ৬০ ভাগ ভারতের ব্যবসয়ীরা কিনে নিয়ে যান। উল্লেখ্য, এতোদিন শুধু ভারত থেকে আমাদের দেশে কাপড় এসেছে। কিন্তু শাহজাদপুরের কাপড়ের গুনগত মানের কারনে শাহজাদপুর হাট থেকেই প্রচুর পরিমানে কাপড় ভারতে চলে যাচ্ছে। এটি শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের একটি গৌরবের বিষয়।
শাহজাদপুরের কাপড়ের হাটটি একটি দর্শনীয় বিষয়ও বটে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু লোক এ হাট দেখতে আসে। তাই হাটটি শাহজাদপুরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বিষয় ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস